এক নির্মম জল্লাদ পিতা ও এক যুবক ছেলের কাহিনী
একটি শিক্ষর্ণীয় ঘটনা
এক বুদ্ধিমান যুবককে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার মতো লোকের নিকট থেকে পিতা-মাতার সাথে যে ধরনের সম্পর্ক আশা করা যায় তা যেন নেই। এর কারণ কি ? যুবকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘটনা বর্ণনা করলো। তার বর্ণনায় শৈশবকালের বর্ণনা এমন ধরনের ছিলো ?
“আল্লাহ আমার পিতাকে শান্তিতে রাখুন। তিনি অত্যন্ত কঠিন প্রকৃতির জল্লাদের মতো একজন মানুষ। শৈশবকালে আমি তার গোস্বা ও ক্রোধে সবসময় কাঁপতাম। রাতে শুয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠার তেমন আকাঙ্ক্ষামাতা-পিতা ও সন্তানের অধিকার
আগতো না। আর সকালে ঘুম থেকে উঠে পিতার নাম আসতে খুবই কুন্ঠাবোধ করতাম এবং মনে মনে এ আশাই করতাম ব্যয় । আজকের দিনটি যদি শান্তিতে অতিবাহিত হতো। গালাগালি এবং মারপিট থাকা যদি একটি দিন কাটতো। কোনো দিন যদি দিনের বেশীর ভাগ শান্তির সাথে কাটতো তাহলে আমি খুব খুশী হতাম এবং বলতাম আজকের দিনটি বড়ো মুবারক দিন। আমি আজ বেঁচে গেছি। কিন্তু সন্ধ্যা হতে হতেই আমার আনন্দ ধুলায় মিলিয়ে যেত।
আমার পিতা সফরেও যেতেন। আমি যখন আনতে পারতাম যে তিনি খুব শীঘ্র ফিরে আসবেন তখন খুব দুঃখিত হতাম। হাঁ মাঝে মধ্যে এ খুশীতে অপেক্ষাও করতাম যে তিনি খানা-পিনার জন্য অবশ্যই কিছু
আনবেন।
আমার পিতার এ কঠোর স্বভাব এবং পাষাণ হৃদয় দেখে আমি মনে করতাম পিতা মাত্রই এ ধরনের হয়ে থাকেন যখনই কোনো ব্যক্তিকে আমার পিতার থেকে বেশী সুস্থ এবং শক্তিশালী দেখতাম ও সাথে তার এটাও জানতাম যে সে অত্যন্ত বাহাদুর ও ক্রোধান্বিত মানুষ তখন আমার দুঃখের সীমা-পরিসীমা থাকতো না। ভাবতাম, তাহলে তার সন্তানদের যেন কি অবস্থা । তারা তো জীবন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। সবসময় তারা গালা-গালি, ভয়-ভীতি এবং মারপিট সহ্য করে থাকে। কোনো কোনো সময় আমি সত্যিই কেঁদে ফেলতাম। যখন কারোর পিতাকে অত্যন্ত দুর্বল, রোগগ্রস্ত অথবা অক্ষম এবং অত্যন্ত নরম প্রকৃতির ও মিসকীন স্বভাবের মনে করতাম তখন তার সন্তানদের সৌভাগ্যের জন্য আমার ঈর্ষা হতো এবং ভাবতাম হায়! আমার পিতাও যদি এ ধরনের দূর্বল, মিসকীন স্বভাব এবং নরম প্রকৃতির হতো তাহলে কতইনা ভালো হতো।"
একথা বলে সে যুবক অনেক্ষণ চুপ করে রইলো। আমি চিন্তা করতে লাগলাম, পিতা হওয়াও কত বড়ো দায়িত্বের কথা। মাতা-পিতা যদি নিজের সন্তানকে ভালো অবস্থায় দেখতে চায় তাহলে তার নিজের আচরণের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। কেননা সন্তান মাতা-পিতার নসিহত থেকে ততখানি শিখে না যতখানি তাদের কাজ ও আচরণে শিখে থাকে।
মাতা-পিতার খারাপ ব্যবহার বা অসদাচরণের তৃতীয় খারাপ পরিণাম হলো নৈতিকতার ব্যাপারটি। এ ধরনের মাতা-পিতার সন্তান নৈতিকতার দিক থেকে অত্যন্ত নীচু স্তরের হয়। দুনিয়ার কোনো মানুষ যদি বড়ো কিছু করতে চায় তাহলে সে নৈতিকতার দিক থেকে অনেক উন্নতমানের হয়। ১৫৮
মাতা-পিতা সন্তানের অধিকার
কিন্তু মাতা-পিতার নিকট থেকে দুর্ব্যবহার প্রাপ্ত সন্তানরা সবসময়ই নৈতিক গুণাবলী হতে বঞ্চিত হয়। সে আত্মবিশ্বাস, সাহস, মান-মর্যাদা, অহমবোধ, আত্মপ্রচেষ্টা, খোশ আখলাক, খোশ মেজাজ, খোশ কালাম প্রভৃতি নৈতিক গুণাবলী থেকে মাহরুম থাকে। বিপরীত রুক্ষস্বভাব অদূরদৃষ্টি, অনুভূতিহীন, বখিলী, নীচতা এবং গর্ব-অহংকারের খারাপ স্বভাবের শিকার হয়। বেশীর ভাগ সময়ই নিজের অস্তিত্বকে এবং সে নিজের সকল দোষ স্খলনের অথবা ঢাকা দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে বড়াই থাকে। আপনি সত্যি সন্তানের শুভাকাঙ্ক্ষী হন তাহলে তাদের অধিকার আদায় এবং তাদের সাথে ধরনের আচরণ আচরণ আপনি নিকট থেকে প্রত্যাশা করেন। আর তখনই আপনি নিয়ামতের কল্যাণ দেখতে অনুভব করতে পারবেন এবং সন্তানদের গভীর অন্তর থেকে আপনার এ দোয়া হবে :
رب ارحمهما كما صغيرا :
“পরওয়ারদিগার আমাদের মাতা-পিতার করুন। শৈশবকালে মেহেরবানী স্নেহের আমাদের প্রতিপালন করেছিলেন।”-সূরা ইসরাঈল : ২৪
Comments