Back Home নবীগণের জীবনী বনী ইসরাইলরা যখন হযরত মূসা ‘আ-এর শরীর সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছিল
ReadbookBD.Com

বনী ইসরাইলরা যখন হযরত মূসা ‘আ-এর শরীর সম্পর্কে অপবাদ দিয়েছিল

মোবাইল দিয়ে ফ্রি তে ইনকাম করুন হাজার হাজার টাকা, বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

হযরত মূসা ‘আ-এর শরীর সম্পর্কে অপবাদ বানী-ইসরায়ীল ছিল অত্যন্ত অপরাধপ্রবণ এবং অপবাদ প্রিয় জাত।
যে গীবত বা পরনিন্দাকে আল্লাহ্ মৃত ভায়ের মাংস ভক্ষণের মত ঘৃণ্য কাজ(৪৯ ঃ১২) বলে বর্ণনা করেছেন,
সেই ঘৃন্য কাজে তারা পরমানন্দ লাভ করত। তারা তাদের পয়গম্বর মূসা 'আ-এর বিরুদ্ধেও অপবাদ রটনা করতে দ্বিধা করল না।
মূসা 'আ-এর কালে বানী-ইসরায়ীলদের মধ্যে একটা অসভ্য প্রথা প্রচলিত ছিল। গোসলের সময় তাদের গায়ের জামা-কাপড় সব খুলে রেখে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে তারা প্রকাশ্যে গোসল করত।
মূসা 'আ কিন্তু কখনই অমন নোংরা কাজ করতেন না। তিনি পর্দার মধ্যেই গোসল করতেন। আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত বুখারী শরীফের এক হাদীসে আছে : মূসা ‘আ খুব লাজুক ছিলেন। সব সময় তিনি তাঁর শরীর ঢেকে রাখতেন। তাঁকে অনাবৃত নগ্ন অবস্থায় কেউ কখনো দেখতে পেতো না। কেউ কখনো তাঁকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেললে তিনি অত্যন্ত লজ্জিত বোধ করতেন।
কিন্তু মুসা ইসলাম এর এই লজ্জা হওয়া পর্দাপ্রীতি সেই নগ্নতার পূজারীদের উত্তেজিত করল। সবাই যেখানে উলঙ্গ হয় সেই রাজ্যে, সেই উলঙ্গ রাজার দেশে মুসা কিনা উলঙ্গতার বিরুদ্ধে এভাবে নীরব প্রতিবাদ করছেন?
এ মুসা তো " রাজার কাপর কোথায় " বলে রাজার সঙ্গে গোটা রাজ্যবাসীকেও ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে পারেন।

সুতরাং এই ব্যাপারটাকে কেন্দ্র করে বানী ইসরায়ীলদের একদল লোক রটনা করল যে নিশ্চয় মুসার দেহে কোন গোপন রোগ আছে, তাই তিনি তা ঢেকে রাখার জন্য সবসময় এত চেষ্টা করেন।
তার গোপন অঙ্গে হয় খেত রোগ, নয় একশিরা, নয় কোড়লের মত ঘৃণ্যরোগ অবশ্যই বিদ্যমান। (বুখারী শরীফ) তারা সবাই ছি ছি করতে লাগল। চি-ছি! কি নোংরা লোক। নিজের দেহে নোংরা রোগ লুকিয়ে রেখে সারা দেশের মানুষের মনের রোগ দূর করার জন্য চেষ্টা করছেন। হায়! হায়! এযে টেকো বলে টাক ভাল হয়! এই অপপ্রচারের ফলে দ্বীন প্রচারের কাজে দারুণ অসুবিধা দেখা দিল। লোকে তাঁকে দেখলেই ঘৃণাভরে পালিয়ে যেত। ওয়াক থু, ওয়াকথো করে বিচিত্র শব্দ ও অঙ্গভঙ্গী করতো। নিজেরা পালাতো আর অন্যদেরও পালিয়ে যেতে প্ররোচিত করতো।
কোড়ল আসছে কোড়ল আসছে-থুঃ থুঃ, করে দল বেঁধে চীৎকার করতো। দাওয়াত দেবেন কি তাঁর কাল্পনিক গোপন রোগ নিয়ে তাদের কানাকানি ব্যঙ্গ বিদ্রূপের বাণে তিনি তটস্থ হয়ে থাকতেন সারাক্ষণ।
মানুষ তাঁর দ্বীন প্রচারের কথায় কান দিত না, কিন্তু তাঁর অপবাদের কথা কানভরে শুনতো। পথের মোড়ে মোড়ে জটলা করে মজলিস বসিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ঐ সব ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও অপবাদ প্রচার করতো। এই অভুতপূর্ব দুরভিসন্ধিপরায়ণ কৌশলের শিকার হয়ে মূসা (আ) বড় অসহায় বোধ করলেন। আল্লাহর কাছে সাহায্য ও শক্তি প্রার্থনা করলেন। অপবাদ-মোচনে আল্লাহর মদদঃ
আমরা জানি আমাদের আখেরী নাবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের বিরুদ্ধে নিন্দা অপবাদের তীর খুব কম বর্ষিত হয়নি।
মরিসি যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার সময় দূরভিসন্ধি পরায়ণ কাফির ও মুনাফিকের দল তাঁকে হতাশ ও হতোদ্যম করার উদ্দেশ্যে তাঁর বুকের পাজরে, তাঁর হৃৎপিন্ডের মধ্যে বিষমাখা তীর আমূল বিদ্ধ করেছিল।
তাঁর সতী সাক্ষ্মী পত্নী বিদুষী আয়েশা (রা)-এর পবিত্র চরিত্রে কলঙ্ক লেপন করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা করেছিল। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাঁর পবিত্র কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ করে সেই অপবাদ মোচন করেছিলেন।
মহানাবী মুহাম্মাদ সা-কে মি’রাজভ্রমণে ষষ্ঠ আকাশে যে মুসা( আ)যে সুযোগ্য নাবী' বলে মুবারকবাদ জানিয়েছিলেন, সেই মুসা আ-এর এই কাল্পনিক অপবাদ মোচনেও আল্লাহ্ ব্যবস্থা নিলেন। দয়াময় আল্লাহ দয়া করে তাঁর দ্বীন প্রচারের এ পথের কাঁটা দূর করে দিতে চাইলেন। আল্লাহ ইচ্ছা করলেন, তাঁর নাবীকে এই অপবাদ থেকে মুক্ত করে দেবেন। (বুখারী)। একদিন মূসা (আ) এক গোপন নির্জন স্থানে গোসল করতে নামলেন। পাহাড় ঘেরা জায়গাটা যেন এক নির্জন গোপন গোসলখানা। স্লিম শীতল পানি। ডুব দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ সারা শরীরে সেই স্লিপ্ততা উপভোগ করলেন। রৌদ্রদগ্ধ শরীরের সকল জ্বালা একেবারে জুড়িয়ে গেল। পানির ভেতর থেকে মাথাটা একবার তুললেন। আবার ডুব দিলেন। আবার উঠলেন। প্রথা অনুসারে তিনি তাঁর জামাকাপড় তীরে এক পাথরের ওপরে খুলে রেখেছেন। এখন ওপরে উঠে সেদিকেই হাত বাড়ালেন। কেউ কোথাও নেই। এখুনি কাপড় পরে নিতে হবে। তিনি চান না কেই তাঁকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলুক। কিন্তু হায় হায়! কাপড়-জামার দিকে হাত বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই পাথরটা সে গুলো নিয়ে দুরে সরে গেল।
মদীনায় হিজরতের পঞ্চমবর্ষে মরিসির যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মু'মিনজননী নারী-পত্নী আয়েশা (রা) শিবিকারোহণে হযরত মুহাম্মাদ সা-এর সঙ্গিনী ছিলেন। প্রাকৃতিক কারণে এক নির্জন জায়গায় তিনি শিবিকা থেকে নামেন। সেখানে অসাবধানে তাঁর হার হারিয়ে যায়। ফিরতে একটু দেরী হয়। এদিকে শিবিকা বা পালকিবাহকেরা মা আয়েশা রা পাল্কিতে ফিরে এসেছেন ভেবে পাল্কি নিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে মা আয়েশা সেখানে ফিরে বিপন্ন বোধ করেন, কিন্তু ধৈর্যের সঙ্গে প্রতীক্ষা করতে থাকেন। হযরত মোহাম্মদ (স) এর আদেশক্রমে সৈন্যদের সবার পেছনে আসছিলেন মাতেলের পুত্র সাফওয়ান। তাঁর দায়িত্ব ছিল পিছনে কিছু পড়ে আছে কিনা তা দেখা।
তিনি আয়েশা রা কে তাঁর উটের পিঠে নেন। আয়েশা (রা)-কে তাঁর উটের পিঠে দেখে আবুর পুত্র আবদুল্লাহ আয়েশা (রা)-এর বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা করে।
মদীনায় পৌছবার পর কথাটা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কানে ওঠে। হযরত আয়েশা (রা)-র প্রতি তাঁর কিছু অনাদর প্রকাশ পায়। তিনি স্বামীর অনুমতি নিয়ে পিতা আবুবাকার (রা) এর বাড়ী যান। সেখানে তাঁর অসুস্থতা অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তিনি দিনরাত কাঁদাকাটা করেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ্ (সা) একদিন গিয়ে বলেন : আয়েশা, পাপ করে থাকলে আল্লাহর আশ্রয় নাও, তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনা) কর। আয়েশার পিতামাতা এর কোন জবাব না দেওয়ায় তিনি নিজেই বলেন : এ শত্রুদের মিথ্যা রটনা। আমার কথা কেউ বিশ্বাস করে না। ইউসুফের পিতা ইয়াকুব যেমন বলেছিলেন 'ধৈর্য ধরছি, দেখি আল্লাহ্ কি করুণা করেন' আমিও তাই বলছি। এই ধৈর্যের ফলশ্রুতি স্বরূপ , ২৪:১১-১৩ আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ্ অপবাদ মোচন করেন। মূসা 'আ-এর অপবাদ মোচনেও আল্লাহ্ এভাবেই সাহায্য করেন।
মুসা (আ) পাথর কে লক্ষ করে । তিনি তাড়াতাড়ি পাথরের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর বুক দুরু দুরু করতে লাগল। কিন্তু পাথরটা সেই কাপড় নিয়ে এবার দ্রুতবেগে দৌড়তে লাগল। মূসা আ ও বিদ্যুৎবেগে তার পেছনে ধাওয়া করলেন। সামনে ছুটন্ত পাথর, পেছনে ছুটছেন আল্লাহর নাবী মূসা '(আ)।

মূসা ‘আ ছুটতে ছুটতে বলতে লাগলেন : ওরে পাথর, আমার কাপড় । ওরে পাথর, ওটা আমার কাপড়! পাথর ছুটতে ছুটতে বানী ইসরায়ালদের
একমজলিসে গিয়ে থামল । মূসা 'আ-ও ছুটতে ছুটতে সেখানেই গিয়ে হাজির হলেন। আর তাড়াতাড়ি করে কাপড়টা তুলে পরে নিলেন। মুহুর্তের জন্য উপস্থিত লোকেরা তাঁকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে নিল। তাদের সামনে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়ে গেল যে হযরত মূসা 'আ-এর শরীর সবরকমের দোষত্রুটি থেকে মুক্ত।
তা আল্লাহর দেওয়া সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। মূসা আ তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নিয়ে তাঁর লাঠি দিয়ে পাথরটিকে মারতে লাগলেন। ফলে পাথরের গায়ে চার পাঁচটা মারের দাগ বসে গেল । (বুখারী )। আল্লাহ্ এভাবেই তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারীদের প্রতিটি খুঁটিনাটি কাজেও সাহায্য করেন। তাদের সমস্যা ও সংকট মোচন করেন। তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। আর আল্লাহ্ যাঁর মর্যাদা করেন অপবাদ রটনাকারীদের সাধ্য কি তাঁর মর্যাদাহানি করে? এদিকে ইঙ্গিত করে পবিত্র কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ্ বলেছেন ঃ হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগন, তোমরা তাদের মত হয়োনা যারা মূসা (আ)কে কষ্ট দিয়েছিল। ওরা যা রটনা করেছিল আল্লাহ্ তা থেকে তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেছিলেন । আর আল্লাহর দৃষ্টিতে সে ছিল মর্যাদাসম্পন্ন । ৩৩,৬৯

157609

Comments

0

স্পনসর